Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

যেভাবে পাবনা ক্যাটল

বাংলাদেশে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন শুরু হয়েছিল আঠারো শতকের শেষভাগে। কাজটি শুরু করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার যৌবনের ঊষালগ্নে যখন পূর্ববঙ্গে পদার্পণ করেছিলেন তিনটি অঞ্চলের জমিদারি দেখভাল করার জন্য, কাজটি তিনি তখনই শুরু করেন। বাস্তবিক অর্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার ছিলেন না; বরং তিনি জমিদারি প্রথার বিরোধী একজন বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর ছিলেন। আমরা তার পরিচয় পাই অচলায়তন অথবা রক্ত করবী নাটকে অথবা রথের রাশি কাব্যে। সাঁওতাল, ডোম, সুইপার, মুচি কম উঠে আসেনি তার সাহিত্যে। বলা যেতে পারে তিনি সমাজে বঞ্চিত-লঞ্ছিত মানুষের সেবা করার জন্য জমিদারির ধন অকাতরে বিলিয়েছেন। এ মানুষটি এসবের স্বাক্ষর রেখেছেন তার লেখায় এবং কাজে। নোবেল বিজয়ে প্রাপ্ত পুরো অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন খরাপ্রবণ পূর্ববঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁ জেলার বা পতিসরের কৃষকের জন্য। নোবেলের অর্থ দিয়ে তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রথম চালু করেছিলেন কৃষকের সমবায় ব্যাংক। এ ব্যাংকের পুরো লগ্নি ছিল রবী ঠাকুরের নোবেলের অর্থ। কৃষি কাজকে তিনি এমনভাবেই উৎসাহিত করেছেন, পৃষ্টপোষকতা করেছেন।
পূর্ববঙ্গে যখন শাহজাদপুর অঞ্চলে তার পরগনা দেখতে আসতেন; তিনি আসতেন নৌপথে। নদীমাতৃক পূর্ববঙ্গ তার সৃজনশীল মন খুলে দিয়েছিল অন্যভাবে। বর্ষার যত গান, যত কাব্য সব তো তিনি লিখেছিলেন পদ্মা, মেঘনা, যমুনার উত্তাল ঢেউয়ে উদ্বেলিত হয়ে। উম্মত্ত পদ্মা আর ষড়ঋতুর বিচিত্র আকাশ রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে যে কত রূপ দিয়েছিল তা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু তিনি ভাবেননি অথবা লেখেননি। নদীর সাথে বসবাস যেসব মানুষের, তাদের ভাঙা গড়ার অনিশ্চিত জীবনকে কীভাবে কল্যাণকর জীবনে রূপান্তর করা যায়, রবীন্দ্রনাথ তা ভেবেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে। সে ভাবনা থেকেই এদেশে চলনবিল এবং গোয়ালা নদীর তীরের জলমগ্ন মানুষদের জন্য তিনি হাতে নিয়েছিলেন গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন কার্যক্রম। যমুনা থেকে বড়াল, বড়াল থেকে গোয়ালা এবং এর চারপাশ দিয়ে চলনবিল; এলাকাটি শাহজাদপুর। তদানীন্তন পাবনা  জেলার একটি থানা। বড় বিচিত্র এখনাকার ভূ-প্রাকৃতিক রূপ। শুকনো মৌসুমে এখানে জমিনগুলো জেগে থাকে ৬ থেকে ৯ মাস। আর বর্ষার পানির নিচে, বর্ষায় এ অঞ্চলের মানুষের আশ্রয় কেবল পাহাড়ের মতো মাটির ঢিবির ওপরের ঘরবাড়ি। এখানকার মানুষ সরল কিন্তু অলসও বটে। দারিদ্র্য এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কাজে হাত দিলেন। ব্যবহার করলেন গোয়ালা নদী। একটি নদীকে সম্পদ ভাবলেন রবী ঠাকুর এবং এ সম্পদ ব্যবহারের চিন্তায় মগ্ন হলেন কবি। এখানকার অলস মানুষ বিস্তীর্ণ জমিতে গতর খাটায়, মাঠে বেশ গরু বাছুর দেখা যায়।
রবীন্দ্রনাথ শুরু করলেন গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের কাজ। এজন্য ভারত থেকে নিজ অর্থে নিয়ে এলেন শাহীওয়াল ও সিন্ধি জাতের কিছু ষাড়। ষাড়গুলো রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুর অঞ্চলের কৃষকের মাঝে বিতরণ করলেন। যাদের ষাড় প্রদান করা হলো তাদের জন্য শর্ত একটাই, সেটা হলো তাদের খর্বাকৃতির গাভীগুলো যখন প্রজননে আসবে, তখন এ উন্নত জাতের ষাড় দিয়ে শংকরায়ন করাতে হবে এবং তা বিনামূল্যে। শুরু হলো বঙ্গদেশে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন কার্যক্রম। শ্রী ঠাকুর ষাড়ের মালিকদের প্রতি মাসে ৩০ টাকা করে বরাদ্দ করলেন সেসব ষাড়ের খাদ্য, যতœ এবং ওষুধপত্রের জন্য। ৩০ টাকা তখনকার সময় একজন উচ্চ মানের সরকারি কর্মকর্তার বেতনের চেয়ে বেশি ছিল। শাহজাদপুরের প্রজারা ভালো একটি কাজ পেয়ে গেলেন। রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন শাহজাদপুরে গরুর জাত উন্নয়ন হবে। সুতরাং উন্নত জাতের গবাদিপশুর জন্য চারণভূমি প্রয়োজন। শ্রী ঠাকুর নিজের জমিদারি থেকে ৬০৭ হেক্টর জমি গরুর বাথানের জন্য দান করলেন। বিস্তীর্ণ এ জমিতে শাহজাদপুরের গরু নাক ডুবিয়ে সবুজ ঘাস খায়, এদের স্বাস্থ্য অত্যন্ত সুঠাম, রোগব্যাধী নেই, দিনভর ঘাস খায় আর সময়মতো গোয়ালা নদীতে গোসল করে, সাঁতার কাটে শাহজাদপুরের গরু। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। দেখতে দেখতে অতি অল্প সময়ে কয়েক হাজার সংকর জাতের গাভী সৃষ্টি হলো শাহাজাদপুরে। এরা স্বাভাবিক নিয়মে দিনে ১০-১৫ লিটার দুধ দিতে শুরু করল, এ গাভীগুলো শাহাজাদপুর তথা পূর্ববঙ্গের আবহাওয়ার সাথে বেশ খাপ খাইয়েছিল। এরা রোদ, বৃষ্টি, শীতে ভীষণ রকম সহনশীল একটি ভিন্ন ধারার গরুর জাত। এ জাতের তখন নাম হলো পাবনা ক্যাটল এবং এর জনক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বর্তমানে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের দিগ¦দিক গতিধারায় পাবনা ক্যাটল আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সত্যি কথা বলতেই হয়, পাবনা ক্যাটল কিছু নিজস্ব সকীয়তা নিয়ে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের দেশে ফ্রিসিয়ান, শাহীওয়াল দিয়ে জাত উন্নয়ন শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সাল থেকে। কিন্তু বড় সত্যি কথা হচ্ছে প্রায় ৫০-৫৫ বছর সময়ের মধ্যে শাহজাদপুর অঞ্চলে একটি অধিক দুগ্ধ উৎপাদনশীল গরুর জাত সৃষ্টি হয়েছিল বলেই ১৯৪৭ সালে সেখানে দুধ পাউডার করার শিল্প স্থাপিত হয়েছিল। সে এক বিস্ময়কর অধ্যায়, ১৯৪৭ সালে সম্ভবত এ দেশে কৃষিভিত্তিক অন্য কোনো শিল্প এত সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। অথচ পেয়েছিল দুধ পাউডার করার একটি আধুনিক শিল্প; শাহজাদপুরের কোল ঘেসে, লাহিরী মোহনপুর রেলস্টেশনের পূর্বপাশে। শুধু দুধ পাউডারকরণ কেন? দগ্ধ উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি সমবায়ও গড়ে উঠেছিল পাবনার শাহজাদপুরে। কালের প্রবাহে আজ সব কেমন বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এ বঙ্গের গর্ব করার মতো গরুর দুটি জাত আজ বিলিন হতে চললো, কেউ এর খোঁজ রাখে না; কেউ এসব নিয়ে ভাবেন না। বিলিনের পথে দুটি জাতের মধ্যে একটি পাবনা ক্যাটল অন্যটি রেড চিটাগাং ক্যাটল। যারা গবাদিপশুর উন্নয়ন নিয়ে বাস্তবমুখী চিন্তা করেন, তাদের যতœকরে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়। আজ বিশৃঙ্খল জাত উন্নয়নের ধারায় আমরা আমাদের নিজস্ব জাতের গরু ধরে রাখতে পারছি না। খুব সত্যি কথা হচ্ছে, যদি খুব নির্বাচিতভাবে আমরা পাবনা ব্রিড এবং চিটাগাং ব্রিড দুটি টিকিয়ে রাখতে পারতাম তবে কত উপকার আমাদের হত তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কারণ দুটি জাতের গরুই কম খায়, এদের রোগব্যাধী কম হয় এবং এরা বেশি দুধ দেয়। দুটি জাতই বিরূপ আবহাওয়ায় বেশি সহনশীল।
একটি অপ্রিয় সত্যি না বললেই নয়; সেটি হচ্ছে যত্রতত্র কৃত্রিম প্রজনন। এসব করে আজ দুধের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে বটে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের জন্য যে শত শত কোটি টাকা ব্যয়  করা হচ্ছে এর ফল আমরা কি পাচ্ছি? দেশে ৭০ লাখ সংকর জাতের গরু আছে। কিন্তু সংকর জাতের গাভীগুলোর প্রজনন স্বাস্থ্যের হাজারো সমস্যা, অধিকাংশ গাভী একবার বাচ্চা দেয়ার পর আর গর্ভধারণে সক্ষম হচ্ছে না। আমাদের ধারণা কেবল কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে দিলেই হয়ে গেল, এখন দুধের নহর বইবে। আসলে কী তাই? এখানে কৃত্রিম প্রজনেনর ফলে গাভীর মৃত্যু, বাছুরের মৃত্যু, ওলানফোলা রোগ, রিপিট ব্রিডিং, প্রজনন ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হওয়া, মিল্কফিভার এসব ঘটনা মাঠ পর্যায়ে হাজারে হাজারে ঘটছে। কিন্তু মূল্যবান এ গোসম্পদের সঠিক উন্নয়নের জন্য এ বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই, নেই কোনো সঠিক তথ্য, নেই কোনো প্রতিকারের বিধান। ফলে ফ্রিসিয়ান এবং শাহীওয়াল জাতের বীজ দিয়ে সংকরায়নের কারণে দেশে প্রাথমিক পর্যায় ১৯৮০-১৯৯০ সাল পর্যন্ত গাভীপ্রতি দুধের উৎপাদন ২০-৩০ লিটারের বেশি ছিল। কিন্তু এ দুধের উৎপাদন কমে বর্তমানে ৮ লিটারে নেমেছে। তা হলে কী বলা যাবে না শুধু কৃত্রিম প্রজনন করালেই গাভীর দুধ বাড়ে না। বরং দুধ কমে এবং জাতটি ঝুঁকিপূর্ণ একটি জাতে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে জাত টিকাবার জন্য অনেক ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়, গবেষণা করতে হয়; যা বাংলাদেশে করা হয় না।
কৃষকের বন্ধু রবীন্দ্রনাথ যে পাবনা ব্রিডের সৃষ্টি করেছিলেন। সে জাতের গাভী প্রায় ৭০-৮০ বছর পর্যন্ত ১২-১৫ লিটার দুধ দিত বিনা যতেœ। আমরা হুজুগে সব নষ্ট করি, তারই ধারাবাহিকতায় নষ্ট করেছি পাবনা ব্রিড এবং চিটাগাং ব্রিড। একজন পেশাজীবী হিসেবে বলতেই হয়, জাত উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে যদি সংকরায়ন করানো যায়, যদি গো খাদ্যের জন্য চারণভূমি তৈরি করা যায়, যদি গোয়ালা নদীর মতো রক্ষা করা যায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ দেশের সব শাখা নদী। যদি রক্ষা করা যায় চলনাবিল, জবাইবিল, টাংগুয়ার হাওর, হাকলুকি হাওর, বাইক্কাবিল তবেই হয়ত প্রাকৃতিক পরিবেশে এদেশে সৃষ্টি হতে পারে অধিক উৎপাদনশীল গবাদিপশু, যার মাধ্যমে দেশ দুধে স্বংয়সম্পূর্ণ হবে এবং এদেশের দুধ রফতানি করা যাবে বিদেশে। এর জন্য বছরের পর বছর শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই প্রয়োজন আছে কেবল রবীন্দ্রনাথের পাঠশালা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

কৃষিবিদ ডা. এম এ সবুর*
*সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার, এফডিআইএল, মানিকগঞ্জ


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon